বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ও যেসব সুন্দরী তরুণীদের পেছনে পাত্রের লাইন লেগে থাকতো আজ তারাই বিয়ের জন্য পাত্র পাচ্ছেন না। এদের অনেকেই স্নাতকোত্তর পাস করে দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে চার/পাঁচ বছর ধরে কাজ করছেন। দেখতে সুন্দরী, যোগ্যতাও কম নাই তবুও মিলছে না পছন্দের পাত্র।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মূলত সমপর্যায়ের শিক্ষিত পাত্র না পাওয়ার কারণেই তৈরি হচ্ছে এই সংকট। এছাড়া ছেলেদের কিছু মানসিকতার কারণে এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সমাজবিজ্ঞানী ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘এক্ষেত্রে ছেলেরা মনে করে সে যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছে সেই মেয়েটি উচ্চ শিক্ষিত স্বাবলম্বী, তার নিজের চিন্তা ভাবনা আছে, সে ওই মেয়েকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না, বয়সটা একটু কম হলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে- এ ধরনের হীনমন্যতা ছেলেদের মধ্যে কাজ করে। আর আমাদের সমাজ ব্যবস্থাটাই এ ধরনের মানসিকতা তৈরি করে। আর এ বিষয়গুলোই কিন্তু একটি উচ্চশিক্ষিত মেয়ের বিয়েতে প্রভাব পড়ে।’
তিনি বলেন, বর্তমানে যৌথ আয়ের পরিবার বাড়ছে। আর যৌথ আয়ের পরিবারে একটি মেয়েকে নানা চাপের মধ্যে থাকতে হয়। তার সংসারের চাপ, কর্মস্থলের চাপ ইত্যাদি। এ জন্য পুরুষদের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, উচ্চশিক্ষিত নারীকে নিয়ন্ত্রণে রাখার যে চিন্তা, সেই হীনমন্যতা ত্যাগ করা উচিৎ। এখানে নারীকে নিয়ন্ত্রণে রাখা বা হীনমন্যতায় ভোগার বিষয় নেই। নারী বা স্ত্রীকে প্রতিযোগী ভাবারও কোনো কারণ নেই।
এ নিয়ে নারীনেত্রী খুশী কবির বলেন, ‘স্ত্রীর বয়স কম হলে তার পরিণত অবস্থান কম হবে, আর লেখাপড়া কম হলে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা কম থাকবে। এক্ষেত্রে একজন পুরুষ কিন্তু তার স্ত্রীকে সঙ্গী হিসেবে দেখছে না। এটি কিছু পুরুষের অপরিণত মানসিকতা। একই সঙ্গে আস্থাহীনতাও। যার নিজের ওপর আস্থা কম থাকে তখন সে অন্যজনকে দমন করতে চায়। তারও যে কর্তৃত্ব আছে এটিও প্রমাণ করতে চায়। তবে, যার নিজের ওপর আস্থা আছে তার কর্তৃত্ব কোথাও প্রমাণ করতে হয় না।
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, শিক্ষিত মেয়েরাই কিন্তু ভালো গৃহিণী, ভালো মা এবং ভালো মানুষ হয়। একজন কম শিক্ষিত নারীকে তার স্বামীর অর্থের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু একজন শিক্ষিত ও কর্মজীবী মেয়েকে ওই সমস্যায় পড়তে হয় না, সে তেমন অপচয়ও করে না। কিন্তু যে পরিবারের ছেলেরা নেতিবাচক পারিবারিক শিক্ষা পায় তাদের মধ্যেই আসলে এ ধরনের নেতিবাচক মানসিকতা কাজ করে।
সবার মানসিক চিন্তা ধারার মধ্যে পরিবর্তন আসলেই এ ধরনের সমস্যা থেকে সহজেই উত্তরণ হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র- দৈনিক মানবজমিন
পাঠকের মতামত